মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

দুদকের গুরুত্বপূর্ণ নথির তথ্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক দুদকের পিএ শফিক

দুদকের গুরুত্বপূর্ণ নথির তথ্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক দুদকের পিএ শফিক

প্রকাশ:

দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথির তথ্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর/পিএ- ডিরেক্টর (বিঃঅনুঃ-২) শাখার শফিকুর রহমান।

বাংলাদেশের সরকারী বেসরকারি সকল ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশকে একটি দুর্নীতিমূক্ত দেশ গঠনে কাজ করে দুর্নীতি দমন কমিশন তথা দুদক। দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য দুদক অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা করার মাধ্যমে দুর্নীতি কে সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য নিরন্তর ভূমিকা রেখে চলছে। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ এ যাদের নিয়োজিত থাকার কথা তারা যদি নিজেরাই দুর্নীতি তথা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এমনি একজন কর্মচারীর মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম অনেকটাই ম্লান হতে বসেছে।

এই কর্মচারীর নাম শফিকুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন পরিচালক (বিঃঅঃ-২) এর পিএ আছেন। সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন যখন পরিচালক(বিঃঅঃ-২) ছিলেন, তখনো তার পিএ ছিলেন এই শফিক। তখন থেকেই শফিক হয়ে ওঠেন দুদকের মাফিয়া। সৈয়দ ইকবাল হোসেন যখন পরিচালক ও দুদকের যাচাই বাচাই কমিটিতে ছিলেন তখন শফিক বড় কর্মকর্তার পিএ থাকার কারণে অনেক কর্মকর্তার সাথেই তার সখ্যতা গড়ে তোলেন। পিএ হওয়ার কারণে শফিক জানতেন কোন ফাইলে অনুসন্ধান হবে আর কোন ফাইলের অনুসন্ধান হবে না। এই সময় তিনি যেসব ফাইলের অনুসন্ধান হবে না সেই সব ভিক্টিমকে তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফোন দিয়ে তাদের বলতেন আপনার নামে অভিযোগ আসছে আপনি চাইলে আপনার অভিযোগ আমরা গায়েব করে দিব। এই কাজের জন্য তিনি তার আত্মীয় শুভ্রকে ব্যবহার করেন। মুলত এই শুভ্র বিভিন্ন ক্লাইন্টের কাছ থেকে টাকা আনা নেওয়া করেন। সেই সময় তৎকালীন পরিচালকের মাধ্যমে তার কিছু পছন্দের কর্মকর্তাদের পছন্দ মত ফাইলের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতেন এবং পরে ফাইল নিষ্পত্তির নামে কোটি কোটি টাকা নিতেন।

শফিকুর রহমান। ছবি সংগৃহিত

এছাড়াও দুদকের বিভিন্ন ফাইল নিয়ে তিনি সবসময় তদবিরে ব্যস্ত থাকেন এবং কাকে দিয়ে কোন তদন্ত করিয়ে বাচিয়ে দেওয়া যাবে এবং কাকে দিয়ে তদন্ত করে একজন নিরীহ কর্মকর্তাকে ফাসিয়ে দেওয়া যাবে তা সবই হতো তার ইশারায়। টাকার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে তিনি ফাইল নির্ধারণ করেন যে কোন ফাইল ধরা হবে এবং কোন ফাইলটা ছাড়া হবে। দুদকের অনেক অসাধু কর্মকর্তাও আছেন যারা নিজেরা ভুক্তভোগীকে টাকার কথা বলতে পারেন না, তখন শফিকের শরণাপন্ন হন। এরপর শফিক তার চাহিদা মাফিক দর কষাকষি শুরু করে দেন। শফিকের এই বহুমূখী কাজের জন্য দুদকের সবাই তাকে “তদবির” শফিক বলেই জানে। তিনি অফিসে এসে কখনো স্থির থাকেন না, কোন না কোন কর্মকর্তা/সেকশনের কোন রুমে তাকে পাওয়া যাওয়া যাবেই।
তিনি দুদকে এতোটাই প্রভাবশালী যে, তার তদবির কোন দুদক কর্মকর্তা না শুনলে তিনি সেই কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার জন্য যত রকম পথ আছে তার সবই গ্রহণ করে থাকেন।

এছাড়াও শফিক নিজ দপ্তর বাদেও অন্য সকল দপ্তরের ফাইলের খোজ খবর রাখেন। কোন ফাইলের মুভমেন্ট কই, সেই তথ্য তিনি বাহিরে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন এবং কাকে দিয়ে তদবির করালে এই ফাইল নিষ্পত্তি করা সহজ সে বুদ্ধিও বলে দেন। এর ফলে আসামি ফাইলের পজিশন জেনে তদবির করা শুরু করে। এর ফলে দেখা যায় যে অনেক ফাইলের গতি কমে যায় বা অনেক সময় মামলা হওয়ার মত ফাইলেও আসামিকে খালাস দিতে হয়।

স্ক্রিনশর্ট । ছবি সংগৃহিত

সাম্প্রতিক সময়ে দুদক (অনুঃতদন্তঃ-৫) চট্টগ্রাম শাখার একটি ফাইলের অনুসন্ধান রিপোর্টের কপি আসামিদের কাছে শফিক ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন। যার কিছু স্ক্রিনশর্ট আমাদের কাছে এসেছে। এর ফলে আসামিরা বিভিন্ন মহলে তদবির শুরু করেছেন নাম কেটে নেওয়ার জন্য। আরও জানা যায় এই ফাইল নিস্পত্তির জন্য শফিক কোটি টাকা নিয়েছেন অনুসন্ধানাধীন ব্যক্তিদের থেকে। নিষ্পত্তি করতে পারলে শফিককে দিতে হবে আরও কোটি টাকা।
উল্লেখ্য যে, গত ৭-৮ বছরে দুদকের বিভিন্ন ফাইলের তথ্য বিক্রি করে এবং বিভিন্ন কেসের তদবির করে এই তদবির শফিক ঢাকায় ৩ টা ফ্ল্যাট, নান্দাইল জেলার বিভিন্ন জায়গায় কয়েকশো বিঘা জমি ক্রয় করেছেন।
এই রকম দুর্নীতিবাজ একজন কর্মচারীর কারণে দুদকের অনেক অর্জন নষ্ট হতে বসেছে। এখন সময় এসেছে দুদকের মত একটা প্রতিষ্ঠান হতে এদের নির্মূল করে দুদকের লক্ষ্য অর্জনে অটল থেকে প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি পূনরুদ্ধার করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় খবর

আরও পড়ুন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল

জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির...

মেঘনা নদীতে থেমে থাকা জাহাজ থেকে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে থেমে থাকা এমভি আল বাখেরা নামের...

পরিপূর্ণ সংস্কারের পূর্বশর্ত হলো আইন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা: রিজভী

আইন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলেই আর কোন...

পিএইচডি স্কলারশিপ দেবে ইউজিসি, সুযোগ পাবেন ৭৫ জন

পিএইচডি স্কলারশিপ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন...