বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এফডিসিতে নিপুণকে জয়ী করতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম

এফডিসিতে নিপুণকে জয়ী করতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম

প্রকাশ:

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২ সালের নির্বাচন নিয়ে যতটা সমালোচনা হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে আর কখনও এতো বেশি সমালোচনা বা গুঞ্জন চাউর হয়নি। সেবার সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রাথমিক ভোট গণনায় জায়েদ খান জয়ী হন। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত প্রার্থী নিপুণ আক্তার।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের আশীর্বাদপুষ্ট ঢালিউড অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার। বিষয়টি অনেকেরই জানা ছিল। চর্চা হতো গোপনে। এবার বিষয়টি এলো প্রকাশ্যে। আরও জানা গেল ২০২২ সালে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী করতে ১৭ বার ফোন করেছিলেন শেখ সেলিম।

শিল্পী সমিতির সে নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন পিরজাদা হারুন। সেসময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যুক্ত একজন জানিয়েছেন এরকম হবে জানলে তিনি দায়িত্ব পালন করতেন না। জীবনের ঝুঁকি ছিল ধরে নেওয়ারও আশঙ্কা ছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয় যে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। এমন লেভেল থেকে ফোন আসবে, ভাবতেই পারিনি। আমাদের একজনকে সেই সময় নিপুণকে জয়ী করাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব, তার মতো লোক। এটা আমাদের অবাক করেছিল।

একই সুরে কথা বলেন পিরজাদা হারুন। তার কথায়, ‘নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী দেখাতে অনেক ওপর থেকে এক ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকেন। তিনি সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে সরাসরি প্রভাব খাটাতেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন বলা যায়। তিনি নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি সরাসরি “না” বলে দিই। এর আগে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন একবার উপজেলা নির্বাচনে ওই নেতার শ্যালকের জন্য আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিলেন। সে অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানতেন যে আমাকে কেনা যাবে না। এ জন্য আমি বারবার সরকারি চাকরিতে পদবঞ্চিত হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, পরবর্তী সময় মুঠোফোনে ভয়ও দেখানো হয়, এমনকি বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখানো হয় উল্লেখ করে হারুন বলেন, ‘তখন একের পর এক ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হয় যে তুলে নিয়ে যাবে। এখন যে আয়নাঘরের কথা শুনছি, তখন সে রকম কোনো আয়নাঘরের কথা শোনা থাকলে হয়তো সৎ থাকা সম্ভব হতো না। সেই রকম ভয় দেখানো হয়েছিল। পরে একটা জায়গায় যেতে বলেন, যেখানে বড় অঙ্কের টাকা রাখা ছিল। যখন রাজি হলাম না, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। সেটা চলে গেল কোর্টে। তখন নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাকে বানিয়ে দেওয়া হলো অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। নানা কাণ্ডে আমাকে ছোট করা হলো, এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হলো।’

পাঁচবার নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন হারুন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু ২০২২ সালের নির্বাচনে তার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা তাকে মানসিকভাবে এখনও আতঙ্কিত করে বলে জানান হারুন।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় মিশা-জায়েদ প্যানেলের। সেসময় ভোটে জেতেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও জায়েদ। কিন্তু ভোট চুরির অভিযোগে জায়েদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন নিপুণ। এরপর আদালতের সিদ্ধান্তে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন নিপুণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় খবর

আরও পড়ুন

বিগত ৩ নির্বাচনে কারচুপির প্রশ্রয়দাতাদের শাস্তির সুপারিশ করবে কমিশন: বদিউল আলম

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার...

‘এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে অন্তর্বর্তী সরকারের বিব্রতকর অবস্থায় পড়া অস্বাভাবিক নয়’

সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের...

নসরুল হামিদের ৬ হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন, দুদকের মামলা

৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৯৮...

সংবিধান পুনর্লিখনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কমিশন

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঠেকাতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা এবং দুইবারের বেশি...