আওয়ামী লীগের শাসনামলে শোবিজের বেশ ক’জন তারকার অবস্থান ছিল সরকারের পক্ষে। দলটির হয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাতেও অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেই তারকাদের দেখা মিলছে না কোথাও! নেটিজেনরা তাই প্রশ্ন তুলছেন যে, কোথায় আছেন তাঁরা?
সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। গুঞ্জন উঠেছিল, তিনি নাকি দেশ ছেড়েছেন! আশ্রয় নিয়েছেন টলিউডের বন্ধু ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের বাড়িতে। যদিও এই গুঞ্জনকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নায়িকা। এদিকে ফেরদৌসের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, দেশেই লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছেন তিনি।
বিগত সরকারের পক্ষে বেশ সক্রিয় ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে দলীয় নানা আয়োজনে দেখা যেত তাঁকে। এমনকি ক’দিন আগেও বিটিভিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিদর্শনে গিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন এ অভিনেতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেরদৌসের মতো দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন তিনিও।
বিগত সরকারের সুবিধাভোগী বলে অভিযোগ রয়েছে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হওয়া এই অভিনেতাও বর্তমানে আড়ালে। ফেসবুকেও সক্রিয় নন। জানা যায়, সরকার পতনের আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন তিনি। তবে এই নায়কের ঘনিষ্টজনদের ভাষ্য, ফেসবুকে সক্রিয় থেকে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি।
তবে দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুখ খুলেছেন জায়েদ। ভাইরাল হওয়া শিশুর হৃদয়বিদারক ছবিটি নিজের ওয়ালে শেয়ার দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘কোনোভাবেই সহ্য করার মতো না। এটা দেখার পর মানুষ কীভাবে থাকে। বুকের ভেতরটা কাঁদছে যতবার দেখছি। আল্লাহ আপনি এই মাসুম বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে সকল বন্যাবাসী মানুষদের হেফাজত করেন।’
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর আলোচনায় উঠে এসেছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে না জিতেও তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে ২ বছর ছিলেন বলে অভিযোগ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, নিপুণকে অবৈধভাবে জয়ী করতে ১৭ বার ফোন করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিম। এদিকে, সরকার পতনের পর শোনা গিয়েছিল—দেশের বাইরে আছেন নিপুণ। তবে সূত্র বলছে, দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন এই নায়িকাও।
সংসদ অধিবেশনে বিদ্যুৎ ফেরি করে বেড়ানো কণ্ঠশিল্পী মমতাজের অবস্থান নিয়েও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনরোষ থেকে বাঁচতে ইতিমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন মমতাজ। তবে আরেকটি সূত্রের দাবি, বিদেশ পালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন এই কণ্ঠশিল্পী।
এ ছাড়া দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন আরেক অভিনেত্রী শমী কায়সার। অভিনয়ে নিয়মিত না থাকলেও কয়েক বছর ধরে নিজের ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বিটিভিতে আগুন দেয়ার পর পরিদর্শন দলে তিনিও ছিলেন। এ ছাড়া সরকার পতনের পর ই–কর্মাস প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ই–ক্যাবের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এই অভিনেত্রী।
গত ১৪ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দিনভর অবস্থান শেষে সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করার পর সেখানে হামলার শিকার হন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, গুরুতর আহত হয়ে তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
কোটা আন্দোলনের সময় অভিনেত্রী অঞ্জনা ছিলেন শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের গালাগালিও করেন তিনি। সেইসব পোস্ট রীতিমতো ভাইরাল। গত ৩ আগস্ট এফডিসিতে বিটিভি, মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেস টোল প্লাজাসহ দেশের বিভিন্ন জনসেবামূলক স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে ৫ আগস্টের পর তাঁকে আর দেখা যায়নি।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, আজিজুল হাকিম, ডিপজল, মিশা সওদাগর, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, শুভ্র দেব, মুশফিকুর রহমান গুলজার, এসএ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ অনেকেই রয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে।