সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বকেয়া পরিশোধ না করায় এক ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলো আদানি

বকেয়া পরিশোধ না করায় এক ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলো আদানি

প্রকাশ:

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ভারতের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ আদানিকে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি। আদানির বকেয়া বিল রয়েছে ৮৮৬ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা)। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের একটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত জুলাই থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিদ্যুৎ বিল করছে আদানি। বকেয়া বিল পরিশোধে বাংলাদেশকে চাপও দিচ্ছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে অর্ধেকের নিচে নামিয়েছে তারা। এটিকে ‘একতরফা’ চুক্তির সুযোগ বলছে সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, আদানি বিল জমা দিলেই হবে না। বাড়তি দাম দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কয়লার বাড়তি দামের বিষয়টি পিডিবি দেখবে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে পেশাদারির সঙ্গে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই চুক্তির বিষয়গুলো দেখা হবে। ইতিমধ্যে চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এরপর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দেয় তারা। তবে এক বছর পর এখন আবার ২২ শতাংশ বাড়তি দাম চাইছে আদানি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ঝাড়খন্ডে বাংলাদেশের জন্য নির্মাণ করা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুই ইউনিট থেকে দৈনিক বাংলাদেশকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ৭০০ ইউনিটের একটি কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে দেশে লোডশেডিং বেড়ে প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৭ অক্টোবর আদানি বিদ্যুৎসচিবকে চিঠি দিয়ে বিল পরিশোধের দাবি জানায়। চিঠিতে পিডিবির বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া থাকা, ঋণপত্র না পাওয়ার কারণে কয়লা সরবরাহকারী ও কেন্দ্র পরিচালনাকারী এবং ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধে সমস্যার কথা জানায় আদানি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অর্থ না দিলে আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার হবে। এই সময়ে অর্থ পরিশোধ না করায় গত ৩১ অক্টোবর মধ্যরাতে আদানি দুটি ইউনিটের একটি বন্ধ করে দেয়।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বকেয়া পরিশোধের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছিল আদানি। আদানি গ্রুপের প্রধান গৌতম আদানি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে বিদ্যুতের অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পিডিবি আদানিকে অর্থ দিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ঋণপত্র খোলে। তবে ডলার-সংকটের কারণে সেই ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধ করা যায়নি।

প্রসঙ্গ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে বিশেষ বন্ড ইস্যু করেছিল। সে সময় বন্ডের মাধ্যমে ২০ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বাজার থেকে নিয়েছিল সরকার। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া দায় পরিশোধের লক্ষ্যে এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ছিল সিটি ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।

চুক্তি পর্যালোচনা
গত আওয়ামী লীগ সরকার দরপত্র ছাড়া চুক্তি করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১) করেছিল। এই আইনের অধীন নেয়া কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতে যাওয়া যাবে না। এ কারণে এটি দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিতি পায়। এই আইনের অধীন করা চুক্তি পর্যালোচনা করতে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির সভায় ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত ও নথি কমিটিকে সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র। কমিটিকে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় খবর

আরও পড়ুন

গত দুই মাসে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে করেছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত না...

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নাম পরিবর্তন হয়ে যা হলো

যমুনা নদীতে নির্মিত রেলসেতুর নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ...

হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও...

সচিবালয়ে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবস্থান

উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমানো নয় বরং...