তরুণদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সার বাড়ছে, কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম

ফুসফুস ক্যান্সারকে আগে শুধু ধূমপায়ী বয়স্কদের রোগ হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট বদলেছে, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। তরুণদের ক্ষেত্রে এই হার বাড়ছে, এমনকি যারা কখনও ধূমপান করেনি তাদের ক্ষেত্রেও। সেজন্য এর কারণ, প্রাথমিক উপসর্গ চিহ্নিত করা ও প্রতিরোধের উপায় জানা জরুরি।

তরুণদের ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ:

ধূমপান: এখন পর্যন্ত ৮০–৯০% ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় ধূমপান। তরুণদের মধ্যে গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ৭২% ও পুরুষদের ৮১% আগে ধূমপানের অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু তবুও ধূমপান না করা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যা ইঙ্গিত দেয়— অতিরিক্ত ঝুঁকির কারণও রয়েছে।

পরিবেশগত কারণ: পরিবেশগত নানা কারণেও ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। মাটি ও পাথরের ভেতরে ইউরেনিয়ামের ক্ষয় থেকে তৈরি রাডন গ্যাস ঘরের ভেতরে উপস্থিতি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে শৈশব ও তরুণ বয়সে রাডন গ্যাসে বেশি সময় কাটালে ঝুঁকি আরও বাড়ে।

অন্য একটি বড় পরিবেশগত ঝুঁকি হলো সূক্ষ্ম ধূলিকণা। ঘন যানজটপূর্ণ এলাকা ও শিল্প দূষণ বেশি যেখানে, সেখানে বসবাসকারীদের এটি বেশি ক্ষতি করে। এমনকি যারা অ্যাসবেস্টস, সিলিকা, ডিজেলের ধোঁয়া বা আর্সেনিকের মতো উপাদানের সঙ্গে কাজ করেন, তাদের ফুসফুস বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

এ ছাড়াও কাঠ বা কয়লা দিয়ে রান্নার ক্ষেত্রে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। গ্রাম অঞ্চলের নারীরা এই ঝুঁকিতে বেশি ভোগেন।

বংশগত (জেনেটিক) কারণ: বিজ্ঞানীরা ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক উপাদানের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন। কিছু তরুণ রোগীর ফুসফুস কোষে বিশেষ ধরনের জিন মিউটেশন পাওয়া যায়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়াও এইচপিভি ও এপস্টেইন–বার ভাইরাস এর সঙ্গেও এর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। তরুণদের ফুসফুস ক্যান্সার সাধারণত একক কারণে হয় না। বরং ধূমপান, পরিবেশ দূষণ, জেনেটিক প্রবণতা ও কর্মক্ষেত্রের রাসায়নিকের সংস্পর্শ—এই সব মিলিয়েই ঝুঁকি তৈরি হয়।

কোন উপসর্গে সতর্ক হবেন?

প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুস ক্যান্সারে সাধারণত তেমন কোন উপসর্গ থাকে না। আবার অনেক সময় কিছু কিছু উপসর্গ সাধারণ অসুখের মতো মনে হয়। সেজন্য বুঝতে না পারার কারণে চিকিৎসা নিতে দেরি হয়ে যায়।

1. রক্ত বা বাদামি রঙের কফ ওঠা
2. শ্বাস নেয়া কিংবা কাশির সময় বুকের ব্যথা বেড়ে যাওয়া
3. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি
4. বারবার ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণ হওয়া, যা ঠিকমতো সারে না
5. কারণ ছাড়াই ওজন কমা ও ক্ষুধা কমে যাওয়া
6. কণ্ঠস্বর ভেঙে যাওয়া বা দীর্ঘস্থায়ী গলা ব্যথা
7. অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা

এই ক্যান্সার যখন শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তখন কিছু উপসর্গ টের পাওয়া যায়। যেমন, হাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, স্নায়বিক সমস্যা কিংবা ঘাড়/গলার হাড়ের কাছে লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। এমন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয়।

প্রতিরোধের উপায়: ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর ও নিয়মিত জীবনযাপন করতে হবে।

ধূমপান এড়িয়ে চলা: প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সম্পূর্ণভাবে ধূমপান এড়িয়ে চলা। একজন মানুষের জীবনের যেকোনো সময় ধূমপান ছাড়লে এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। ধূমপান ছাড়তে চাইলে কাউন্সেলিং গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

পরোক্ষ ধূমপান এড়ানো: কেউ ধূমপান না করেও ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকেন। সেজন্য ধূমপানমুক্ত জায়গা বেছে নেওয়া উচিত। পরিবারের মানুষ ও সহকর্মীদের অন্য জায়গায় ধূমপান করতে উৎসাহিত করা উচিত।

রাডন গ্যাস পরীক্ষা: ঘরের মধ্যে রাডন গ্যাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করা উচিত। প্রয়োজনে ঘরে টেস্ট কিট দিয়ে শনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা: মানুষকে কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক যেমন অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক এবং ডিজেলের ধোঁয়া থেকে নিজেদের সুরক্ষা করতে হবে—সেজন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত।

রান্না ঘরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা: কাঠ বা কয়লা দিয়ে রান্নার ক্ষেত্রে রান্নাঘরে ভালো ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করা উচিত। এতে নারীরা কিছুটা হলেও ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন।

এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া জরুরি। ফল ও সবজি সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।