দুদকের মামলার পরেও রেলের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েও পদোন্নতি ও পছন্দমতো পদ পেয়েছেন রেলের দুই কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত হয়েও তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো গত ১৯ জুন তাদের উভয়কেই উচ্চ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

দুদকের দায়ের করা পৃথক দুটি মামলার এজাহারে নাম থাকা সত্ত্বেও ফরিদ আহমেদকে সরকারি রেল পরিদর্শক থেকে পদোন্নতি দিয়ে মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) এবং আনোয়ারুল ইসলামকে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) থেকে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পশ্চিম) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা ছিল তাদের দুই জনেই পছন্দের পদবি।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আহসানুল কবির পলাশের দায়ের করা এসব মামলায় অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের সরঞ্জাম ক্রয় প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারকে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে।

একটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অযোগ্য প্রতিষ্ঠান এস এম ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজিকে বেআইনিভাবে কাজ দিয়ে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করা হয়। অন্য মামলায় অভিযোগ, রেলওয়ের ক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র ও মালামালের পরিমাণ পরিবর্তন করে ২৪ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, চুক্তিপত্র জালিয়াতি করে একই মাল একাধিক দেখিয়ে মূল্যের গরমিলের মাধ্যমে এ দুর্নীতি সংঘটিত হয়।

তথ্য অনুযায়ী, একটি ক্ষেত্রে ১টি পাম্প কেনা হয় প্রায় ১১ লাখ টাকায়, কিন্তু জাল কাগজে দেখানো হয় ৩টি পাম্প কেনা হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দরে। একইভাবে, ১টি ওয়াটার পাম্প কেনা হয় ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায়, অথচ জাল চুক্তিপত্রে দেখানো হয় ৩টি কেনা হয়েছে প্রতিটি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দরে।

দুদকের অনুসন্ধান ও মামলার পরেও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের একাংশকে লাভজনক পদে বহাল রাখা হয়েছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ অথবা বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়নি—যা জনমনে প্রশ্ন ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নাই।

জনগণের অর্থে পরিচালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় খাত রেলওয়েতে এ ধরনের দুর্নীতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন, তা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।