শহিদ মিনারে হাজার হাজার শিক্ষকের অবস্থান
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারো শিক্ষক সেখানে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন অংশসহ চারটি সংগঠন এ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। এছাড়াও ঢাকা–চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা শবনম বলেন, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে বেতন নিতে গেলে অফিস সহকারীরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান, আর আমরা শিক্ষক হয়ে পাই ১৩তম গ্রেডে। এই গ্রেড বৈষম্যের কারণে সম্মানও পাই না।
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের আয় এত কম যে বাজারে গিয়ে ভালো মাছও কেনা সম্ভব হয় না। দুই ঈদের বোনাস দিয়েও ঈদ ঠিকভাবে করা যায় না, কুরবানি তো দূরের কথা।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার শিক্ষক ইয়াছিন মিয়া বলেন, সরকারি গাড়িচালকরা পান ১২তম গ্রেডে বেতন, অথচ শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডে। দেশে শিক্ষকদের এই অবমূল্যায়ন অগ্রহণযোগ্য।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন–লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, আলোচনা বহুবার হয়েছে, কিন্তু কোনো ফল নেই। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথেই থাকব।
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবিগুলো হলো- ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি বাস্তবায়ন।
শিক্ষকদের দাবি, প্রতিদিন মাত্র ৬ টাকা টিফিন ভাতা দেয়া হয়। এই টাকায় এক কাপ চাও পাওয়া যায় না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজারের বেশি, আর শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার।
এর আগে সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডের শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়। তবে সহকারী শিক্ষকরা তা পর্যাপ্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সবাই স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ১০ম গ্রেড পান। অথচ আমরা অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ নিয়েও ১৩তম গ্রেডে। এটি বৈষম্য।
এদিকে আরেক অংশের শিক্ষকরা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে সরকারকে তাদের দাবি জানিয়ে বলেছেন, দাবি না মানলে কর্মবিরতি, অর্ধদিবস কর্মসূচি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান পালন করা হবে।