প্রশাসন বিএনপির পক্ষে, নাহিদের এমন বক্তব্যে এনসিপির অবস্থানই প্রতিফলিত

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম

প্রশাসন অনেক জায়গায় বিএনপির পক্ষে কাজ করছে, এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। গণমাধ্যমকে দেয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এমন মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তার এ বক্তব্য দলটির দীর্ঘদিনের অবস্থানেরই প্রতিফলন বলে মনে করেছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা।

বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে আসলেও এনসিপির অবস্থান ভিন্ন। দলটি শুরু থেকেই বলছে, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। আর সেই সংস্কার ছাড়া অনুষ্ঠিত নির্বাচন অংশগ্রহণযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হবে না- গণমাধ্যমকে দেয়া নাহিদের বক্তব্যে এই বার্তাই পুনরায় উঠে এসেছে।

এনসিপির নেতারা মনে করেন, গত বছরের পাঁচই অগাস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিএনপি সমর্থকরা জায়গা করে নিয়েছে। ফলে প্রশাসন ও পুলিশসহ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নির্বাচনে বিএনপি এক ধরনের সহযোগিতা পেতে পারে।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বিবিসি বাংলাকে বলেন, পরবর্তীতে ক্ষমতায় কে আসবে, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র সে অনুযায়ী কাজ করে। এরা (আমলারা) সবসময় একটি আশ্রয়ে থাকতে চায়। আওয়ামী লীগ আমলাদেরকে এতদিন ধরে আশ্রয় দিয়েছে। তাই আমলারা আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বড় দল হিসাবে পরবর্তীতে বিএনপি'র-ই ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আছে। তাই, প্রশাসন দেখলো যে সরকার দ্রুত নির্বাচন দিলে ক্ষমতায় আসবে বিএনপি। সেকারণে বিএনপি'র সাথে তারা এক ধরনের দর কষাকষির মাঝে গেছে। প্রশাসন মানে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের বিএনপি'র প্রতি নমনীয় আচরণ শুরু হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় না নিয়ে ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া আইন অনুযায়ী এগোচ্ছে। এটি হচ্ছে, কারণ বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম বিএনপি সুপারিশ করেছে।

তার দাবী, নির্বাচন কমিশন বিএনপি ব্যতীত বাকিদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। পুলিশ প্রশাসনও থানা পর্যায়ে বিএনপি'র পক্ষে কাজ করছে।

এনসিপির এই নেতার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, নাহিদ ইসলাম তাদের দলের অবস্থানকেই সামনে এনেছেন।

গত বুধবার নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, কোনও ধরনের পরিবর্তন বা মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। পাশাপাশি, সেই নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না, বিবেচনাধীন থাকবে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন দেখছি বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির পক্ষ অবলম্বন করছে। মাঠ পর্যায়ে যে চাঁদাবাজি চলছে, সেখানেও প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। আমরা বলেছি এ ধরনের প্রশাসন থাকলে এর অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন, পুলিশ, আমলাতন্ত্র আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দেখছি প্রশাসন নিরপেক্ষ না।

এদিকে বিএনপির প্রতি প্রশাসনের পাক্ষপাতিত্বের যে অভিযোগ তুলেছেন নাহিদ ইসলাম, সেটাকে ‘পলিটিক্যাল রেটরিক’ বা ‘রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর’ হিসেবে বর্ণনা করছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিবিসি বাংলাকে বলেন, নাহিদ ইসলাম ‘সঠিক কথা বলেননি।’ যা বলেছেন, তা মানুষকে ‘বিভ্রান্ত’ করার জন্য।