পরীক্ষায় না দেখানোয় মাথার খুলি ভাঙল সহপাঠীরা, ৮ দিন পর মৃত্যু

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুরে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে খাতা দেখতে না দেওয়ায় সহপাঠীদের মারধরে আহত শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আট দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ভোরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ১৮ এপ্রিল তাকে মারধর করে তারই সহপাঠীরা।
নিহত ইমন হোসেন (১৬) শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের ইমদাদুল মোল্লার ছেলে।
খুকনী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন তিনি। এদিকে ঘটনার আট দিন পার হলেও দুই থানার ঠেলাঠেলিতে শনিবার পর্যন্ত মামলা করতে পারেননি নিহতের পরিবার। এতে চরম ক্ষুব্ধ পরিবার ও স্থানীয়রা।
নিহত ইমনের বাবা ইমদাদুল মোল্লা বলেন, গত ১৭ এপ্রিল এনায়েতপুর ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালে কয়েকজন সহপাঠী ইমনের খাতা দেখে পরীক্ষা দিতে চাইলে ইমন তাতে রাজি হয়নি।
এর জেরে পরদিন শুক্রবার বিকেলে ইমনকে বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর নতুন পাড়ায় ডেকে নিয়ে মারধর করে তারা। এতে ইমনের বাঁ পাশের মাথার খুলি ভেঙে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গত বুধবার তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
শুক্রবার ভোরে আবারও তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমন মারা যায়।
ইমদাদুল মোল্লা আরো বলেন, আমার ছেলে নম্র-ভদ্র এবং মেধাবী ছিল। পরীক্ষার খাতা দেখে নকল করতে না দেওয়ায় তাকে এভাবে হত্যা করা হবে আমি কখনো ভাবিনি। থানার সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে পুলিশ মামলা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
একই সঙ্গে ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় খুকনী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তোতা মিয়া বলেন, মারধরের ঘটনার পর থেকে বেশ কয়েকবার স্বজনরা এনায়েতপুর ও বেলকুচি থানায় মামলা করতে গেলেও দুই থানার সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি। এনায়েতপুর থানা বলছে, বেলকুচিতে মামলা হবে; আর বেলকুচি থানা থেকে বলছে, মামলা হবে এনায়েতপুরে। ফলে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় মরদেহের সুরতহাল তৈরির সময় এনায়েতপুর থানা পুলিশ বলেছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে এনায়েতপুর থানার ওসি রওশন ইয়াজদানি শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বলেন, শিক্ষার্থী ইমন নিহতের ঘটনায় এনায়েতপুর থানায় জিডি করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর শুক্রবার রাতে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছিল। আজ শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থী ইমন বেলকুচি থানার অন্তর্ভুক্ত দৌলতপুর নতুনপাড়া এলাকায় মারধরের শিকার হয়েছে। কিন্তু তার বাড়ি এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ঘটনার পর স্বজনদের বেলকুচি থানায় মামলা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। নিহতের স্বজনরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে বেলকুচি থানার ওসি জাকেরিয়া ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী ইমন আহত হওয়ার পর স্বজনরা থানায় মামলা করতে এসেছিল। কিন্তু তাদের বাড়ি এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের এনায়েতপুর থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন শনিবার দুপুরে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।