মেঘ বিস্ফোরণ কী এবং কেন হয়?

ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় একটি গ্রাম কর্দমাক্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছে। একই ঘটনা পাকিস্তানেও। সেখানকার পাহাড়ি ঢলে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াইশো। একটি পরিবারে মরদেহ দাফন করার মতো সেই পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বেঁচে নেই— এমন ঘটনাও দেখা গেছে। এই অবস্থায় আলোচনায় চলে আসে ক্লাউডবার্স্ট বা ‘মেঘ বিস্ফোরণ’। অনেকের কাছেই এটি অজানা বা নতুন শব্দগুচ্ছ।
মূলত, মেঘ বিস্ফোরণ এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে এটি। এর প্রভাবে খুব অল্প সময়ে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই বৃষ্টি নামতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বা তার বেশি গতিতে; যা সাধারণ বৃষ্টির তুলনায় অনেকগুণ তীব্র। এর ফলে হঠাৎ বন্যা ও ভূমিধস সৃষ্টি হয়; এবং এটি হয় আকস্মিকভাবে। টের পাওয়া বা এর রেশ বুঝতে পারার আগেই প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় সময়ের সাথে সমানুপাতিক হারে বাড়তেই থাকে।
এটি কেন হয় বা এর নেপথ্যের কারণ কী? এমন প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনার পেছনে মূলত বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার জটিল মিথস্ক্রিয়া দায়ী। আদ্র বাতাস পাহাড়ি অঞ্চলে উঠে ঠান্ডা হয়ে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সৃষ্টি করে। এই মেঘ ভারী হয়ে ফেটে গেলে অল্প সময়ে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ঘটে। এর ফলে আকস্মিক বন্যা, কাদাধস ও ভূমিধস নামতে পারে। তারা আরও মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয় মেঘ বিস্ফোরণের প্রকোপ বাড়িয়ে তুলছে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির আবহাওয়াবিদ রুচিত কুলকার্নির মতে, এটি সাধারণত বর্ষার সময় পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে থাকে। হিমালয়ের পাদদেশে আরব সাগর থেকে আসা আর্দ্র বাতাস পাহাড়ের কারণে ওপরে উঠে যায়, যা ‘অরোগ্রাফিক লিফট’ নামে পরিচিত। এর ফলে বিশাল কিউমুলোনিম্বাস মেঘ (উলম্ব মেঘ) তৈরি হয়, যা বড় আকারের বৃষ্টির ফোঁটা ধারণ করতে পারে। স্বাভাবিক বৃষ্টির মাত্রা সমতল ভূমিতে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী হয়ে থাকে। তবে এই ধরণের পাহাড়ি বৃষ্টির ব্যাপ্তি দুই থেকে তিনদিন এমনকি মাঝেমাঝে এর চেয়েও বেশি পর্যন্ত থাকে।
এর বিস্তৃতি বা প্রভাব বেশ। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু মানুষের জীবন নয়, বরং অবকাঠামোগত ক্ষতির দিক থেকেও মারাত্মক হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ ধরনের মেঘ বিস্ফোরণের ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে।
মেঘ বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব নয়। আবহাওয়া অধিদফতর সাধারণত অতিবৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারে। তবে এত স্বল্প এলাকায়, এত অল্প সময়ের ঘটনার জন্য আলাদা সতর্কবার্তা দেয়া এখনও প্রযুক্তিগতভাবে বেশ কঠিন।
২০১৩ সালের জুন মাসে ভারতের উত্তরাখন্ডের কেদারনাথে এক ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বন্যায় ৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর, ওই বন্যাও হয়েছিল মূলত ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘ বিস্ফোরণের ফলে।