লালসবুজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৪০ পিএম
লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও বামপন্থি রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আগামীকাল সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
বদরুদ্দীন উমর দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। রোববার তাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সবশেষ গত ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে গুলশানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ১০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে সেবার বাসায় ফিরেছিলেন তিনি।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্ধমান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হাশিম ও মাতার নাম মাহমুদা আখতার মেহেরবানু বেগম। ১৯৫০ সালে তার পরিবার ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৫৫ সালে দর্শনে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও ইকোনমিক্সে (পিপিই) ডিগ্রি নেন তিনি।
এরপর প্রথমে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হলে তিনি সেই বিভাগের দায়িত্ব নেন। ১৯৬৮ সালে পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতা করেন তিনি।
শিক্ষকতা ছেড়ে ১৯৬৮ সালে বাম ধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হন বদরুদ্দীন উমর। বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন বদরুদ্দীন উমর। সবশেষ ২০০৩ সালে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন তিনি।
তার উল্লেখযোগ্য বইগুলো, পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, সংস্কৃতির সংকট, সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ, বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা, যুদ্ধোত্তর বাঙলাদেশ, যুদ্ধ পূর্ব বাঙলাদেশ, ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। এছাড়াও তিনি রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাস নিয়ে ৬০টিরও বেশি বই লিখেছেন।
এই বছর শিক্ষা ও গবেষণায় গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বদরুদ্দীন উমরকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার। তবে পুরস্কার নিয়ে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সেগুলোর কোনোটিই আমি গ্রহণ করিনি। অন্তর্বর্তী সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেয়া এই পুরস্কারও আমার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।