লালসবুজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের (FT) দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোপ্রধান জন রিড বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনকালে যা ঘটেছে, তা প্রায় সিনেমার কাহিনির মতো। “বাংলাদেশের মিসিং বিলিয়নস: স্টোলেন ইন প্লেইন সাইট” নামের তথ্যচিত্রে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা) পাচারের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ অর্থ কীভাবে দেশ থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকারের শাসনকালে ব্যাংক দখল, অর্থ পাচার, এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের বহু ঘটনা ঘটেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এফটি বলেছে, বাংলাদেশ থেকে লুট হওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে কোথায় চলে গেছে, এবং তা ফেরত আনা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে তারা বিভিন্ন বিক্ষোভকারী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, বিশেষ করে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় বিভিন্ন ব্যাংক দখল করা হয়েছে। এসব ব্যাংকে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে চলে গেছে। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
তথ্যচিত্রে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক বলে জানা গেছে। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) এসব সম্পত্তি শনাক্ত করে জব্দ করেছে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চৌধুরী অবশ্য FT-এর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অর্থ পাচারের কয়েকটি প্রধান কৌশল উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ওভার ইনভয়েসিং’ এবং ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে। আরেকটি বড় মাধ্যম ছিল হুন্ডি (হাওলা), যার মাধ্যমে অবৈধ অর্থ স্থানান্তর করা হয়।
এ ছাড়া, তথ্যচিত্রে এস আলম গ্রুপ-এর বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও গ্রুপটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের দাবি, সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তথ্যচিত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ও ব্যবসায়িক খাতে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুটপাট হয়েছে, যা সম্ভবত বিশ্বের কোনো দেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অর্থ লুণ্ঠন।”