লালসবুজ২৪.কম
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বুধবার সাধারণ ছুটি ও ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৬ পিএম

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বুধবার সাধারণ ছুটি ও ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশজুড়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। বুধবার থেকে শুক্রবার ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি এই শোক পালন করা হবে। পাশাপাশি বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সারা দেশে এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতি একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অভিভাবককে হারিয়েছে। গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্থায়ীভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার আপসহীন নেতৃত্ব দেশকে বারবার দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মরহুমার শোকসন্তপ্ত পরিবার, রাজনৈতিক সহকর্মী এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং দেশবাসীকে ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান।

শোকের এই সময়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়—সে বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।

এদিকে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক শোকবার্তায় বলা হয়, “বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের নামাজের পরপরই ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।”

দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল বলে জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করা বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদারের কন্যা। ১৯৬০ সালে তিনি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে অংশ নেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বহু গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির সাধারণ সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে তার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।

আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তাকে একাধিকবার গ্রেপ্তার ও গৃহবন্দী করা হয়।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার শাসনামলে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং শিক্ষা খাতে নেওয়া হয় যুগান্তকারী উদ্যোগ। যার মধ্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ও মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও উপবৃত্তি কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য।

২০০১ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়ে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো কোনো সংসদীয় নির্বাচনে পরাজিত হননি—যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরল রেকর্ড।

লালসবুজ২৪.কম
ইমেইল: info@lalsobuj24.com