লালসবুজ২৪.কম
তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নামল ১২ ডিগ্রিতে, বাড়ছে শীতের তীব্রতা

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম

পঞ্চগড়ে দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা। গত কয়েকদিন ধরেই হিমেল হাওয়ার দাপটে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। রোববার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে, শনিবার (২২ নভেম্বর) একই সময় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ।

গত ১ সপ্তাহ ধরে এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রির ঘরে। আজ সকাল ৬টায় তাপমাত্রা নেমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রির ঘরে। হিমালয় থেকে ধেঁয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস এখনো বইতে শুরু না করলেও ভিন্ন মাত্রায় শুরু হয়েছে শীত। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে আসলেও দিনের প্রখর রোদে তাপমাত্রা বাড়ছ । সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় এখনও তেমন একটা শীত অনুভূত হচ্ছে না এই অঞ্চলে।

গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। আর সন্ধ্যা ছয়টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার এই বিরূপ আচরণে বাড়ছে শীতজনীত রোগ। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। জেলার সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলোতে মূলত কার্তিকের শুরু থেকেই শীতের আগমন হয়। আর কার্তিকের শেষ থেকে শীত জমে উঠে। কিন্তু কার্তিক পেরিয়ে অগ্রহায়নেও সেভাবে শীতের দেখা মিলছে না। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গিয়ে অধিক শীত অনুভূত হচ্ছে। আর সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকে বাড়তে থাকে রোদের তেজ।

পরিবেশবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতু বৈচিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এরই প্রভাবে শীতের সময়ের কাঙ্খিত শীতের দেখা মিলছে না। পরবর্তী বছরগুলোতে এই প্রভাব আরও বেশি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে, আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাব জনস্বাস্থ্যে ফেলছে ব্যাপক প্রভাব। দিনজুড়ে রোদের দাপট থাকলেও রাতে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে বেশ নিচে। ফলে প্রকৃতিতে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত আচরণ। দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা। এরই প্রভাবে জেলার অধিকাংশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে।

চিকিৎসকরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই এই সময়টাতে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মনোয়ারুল ইসলাম জানান, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে চলতি সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিনশ রোগী বহি:বিভাগে আসছে। এদের মধ্য থেকে ২০-২৫ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। বাকিদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জীতেন্দ্র নাথ রায় জানান, চলতি সপ্তাহে তেঁতলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে অবস্থান করছিল। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আগামী সপ্তাহেও সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পরিবর্তন আসতে পারে।

তিনি আরও জানান, চলতি মাসের শেষের দিকে পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

লালসবুজ২৪.কম
ইমেইল: info@lalsobuj24.com