লালসবুজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
গত মাসে ইসরায়েলের ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের সময় বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট হরমুজ প্রণালী অবরোধ ও সেখানে মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এমনটাই দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
জানা গেছে, ১৩ জুন ইসরায়েলের ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার সম্ভাব্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে তেহরান। তবে প্রণালীতে এখনো এসব মাইন বসানো হয়নি।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত সামুদ্রিক রুটগুলোর একটি হরমুজ প্রণালী। প্রতিদিন বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ তেল ও গ্যাস এখান দিয়ে পরিবাহিত হয়। এটি বন্ধ হলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং তেলের দাম দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। বর্তমানে হরমুজ প্রণালী খোলা রয়েছে এবং এতে নিরাপদে জাহাজ চলাচল করছে।
হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’, হুতিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান এবং সর্বোচ্চ চাপ ও কৌশলের কারণে হরমুজ প্রণালী এখনও খোলা, নৌ-চলাচল স্বাভাবিক এবং ইরান দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।’
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধের একটি প্রস্তাব পাস করে। যদিও এটি ছিল অ-আবশ্যিক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের। এর আগে, ইরান অতীতেও হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছে, কিন্তু কখনও বাস্তবে তা করেনি।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মাইন বোঝাইয়ের বিষয়টি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখানোর কৌশল হতে পারে। আবার সত্যিকার অর্থেই, যদি ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্দেশ দেয়, তাহলে যেন দ্রুত প্রণালী বন্ধ করা যায় সে জন্যই হতে পারে এমন প্রস্তুতি।
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে পাঁচ হাজারের বেশি নৌ-মাইন রয়েছে, যা দ্রুত ছোট ও উচ্চগতির নৌকা দিয়ে বসানো সম্ভব।
প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালী ওমান ও ইরানের মধ্যবর্তী অঞ্চল, পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরের সংযোগস্থল। প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ মাত্র ২১ মাইল প্রশস্ত, যেখানে জাহাজ চলাচলের নির্ধারিত পথ দুই পাশে ২ মাইল করে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাক তাদের বেশিরভাগ অপরিশোধিত তেল এই পথ দিয়েই রপ্তানি করে। কাতারও তার এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) মূলত এখান দিয়েই রপ্তানি করে। এমনকি ইরান নিজেও এই পথ দিয়েই তেল রপ্তানি করে, যা তাদের জন্য এই প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্ববিরোধী করে তোলে।
বাহরাইনে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর এ অঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত। তবে ইরানে হামলার আগে সম্ভাব্য প্রতিশোধের আশঙ্কায় সকল মাইনবিরোধী জাহাজ (এমসিএম) সাময়িকভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। ইরান যদিও শুধু কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।