লালসবুজ২৪.কম
নেপালি ‘নেপো কিডদের’ বিলাসী জীবনও ছিল জেন-জি বিক্ষোভের মূলে

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

গত এক সপ্তাহ ধরে নেপাল উত্তাল, এক ভয়াবহ বিক্ষোভের সাক্ষী। জনগণের ক্ষোভ, সরকারের দুর্নীতি এবং অদক্ষতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেছে সাধারণ মানুষ। তবে, আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় 'নেপো কিডদের' বিলাসবহুল জীবনযাপন।

বিশেষত, জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে এ আন্দোলন শুরু হওয়ায়, প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। আন্দোলন দমাতে পুলিশ গুলিতে ৫১ জন নিহত এবং ১ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। কিন্তু, কেন এত বড় প্রতিবাদ?

বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, নেপালের সাধারণ জনগণ কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি আর অভাব-অনটনে কাতর। অন্যদিকে, রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানরা, যাদের অনেকে 'নেপো কিড' হিসেবে পরিচিত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিলাসবহুল জীবনযাপন প্রকাশ করছে। দামি গাড়ি, ব্র্যান্ডেড হ্যান্ডব্যাগ, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এসব ছবি পোস্ট করে তারা যেন সাধারণ জনগণের যন্ত্রণাকে আরও তীব্র করে তুলছে।

টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স (পুরনো টুইটার) এমন হাজারো ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে কিভাবে এই 'নেপো কিড'রা বিলাসী জীবন কাটাচ্ছে, যখন সাধারণ মানুষ তাদের কষ্টে দিনযাপন করছে। "পলিটিশিয়ান্স নেপো বেবি নেপাল" কিংবা "নেপো বেবিস" এই ধরনের হ্যাশট্যাগগুলো একের পর এক ভাইরাল হয়েছে, যেখানে জনগণ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

একটি বিশেষ নাম উঠে এসেছে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধ খাঁতিওয়াড়ার মেয়ে শৃঙ্খলা খাঁতিওয়াড়ার। তার বিলাসী জীবনযাপনের ছবি ভাইরাল হলে আন্দোলনকারীরা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ইনস্টাগ্রামে এক লাখেরও বেশি অনুসারী হারান তিনি।

শুধু তাই নয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ গায়িকা শিভানা শ্রেষ্ঠা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ডের নাতনি স্মিতা দাহালসহ অনেক রাজনীতিবিদদের পরিবারের সদস্যদের বিলাসবহুল জীবনকেও জনগণ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

আন্দোলনকারীরা স্লোগান তুলেছে, "সাধারণ মানুষ দিন-রাত সংগ্রাম করছে, আর এই নেপো কিডরা বিলাসিতা করছে!" দেশটির দুর্নীতির চিত্রও কিছুটা প্রকাশ পেয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া খুব কমই দেখা গেছে।

এ পরিস্থিতিতে, ৭৩ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং একে একে মন্ত্রীরা সরে দাঁড়ান। এখন, নেপালে কার্যত নেতৃত্বহীন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল জনগণের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, সেনাবাহিনী দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেছে, রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনারা, এবং অধিকাংশ শহরে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। জনগণ এখন আরও ক্ষুব্ধ, আর এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।

লালসবুজ২৪.কম
ইমেইল: info@lalsobuj24.com