লালসবুজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ফরাসি উপকূল থেকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে প্রায় প্রতিদিনই ছোট নৌকায় বিপজ্জনক যাত্রা করছেন বহু অনিয়মিত অভিবাসী। এই যাত্রা ঠেকাতে পানিতে বিশেষ জাল ফেলে নৌকার মোটর “নিষ্ক্রিয়” করার একটি নতুন পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে পারে ফরাসি কর্তৃপক্ষ।
এমন দাবি করেছে ফরাসি দৈনিক লো মোন্দ ও অনুসন্ধানী গণমাধ্যম লাইটহাউস রিপোর্টস। তবে ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি।
গত বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিবাসীবাহী ‘স্মল বোট’ আটকাতে পানিতে এমন জাল ফেলবে, যা নৌকার মোটর বন্ধ করে দিতে পারে। এতে নৌকাগুলো গতি হারিয়ে থেমে যাবে।
লো মোন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা অত্যন্ত কঠিন হবে। কারণ জাল ফেলতে গিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি রয়েছে। মাদকবাহী দ্রুতগতির নৌকা ঠেকাতে আগেই এই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মাদকবাহী দ্রুতগতির নৌকা থামাতে ব্যবহৃত কৌশল অভিবাসীদের বহনকারী অতিরিক্ত ভিড় ও নড়বড়ে রাবারের নৌকার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
সমুদ্র আইনের বাধা ও পুরোনো বিতর্ক
চ্যানেলে নৌকা থামানোর বিতর্ক নতুন কিছু নয়। গত গ্রীষ্মেও ফরাসি কর্তৃপক্ষ অভিবাসীবাহী নৌকায় হস্তক্ষেপের চিন্তা করেছিল। কিন্তু সমুদ্র আইন অনুযায়ী ফরাসি পুলিশ পানিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। শুধু উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। কারণ এমন হস্তক্ষেপে আতঙ্ক, বিশৃঙ্খলা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
এ কারণে ফ্রান্সের আন্তঃমন্ত্রণালয় অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ কমিটি (সিআইসিআই) সমুদ্র-সংক্রান্ত সরকারি সমন্বয়কারী দপ্তরকে এই নীতি “পরিবর্তনের” প্রস্তাব দিতে বলেছিল।
লো মোন্দ বলছে, বর্তমানে পানিতে জাল ফেলার এই পদ্ধতি সেই প্রস্তাবেরই ফল। তবে ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও বিষয়টি “নিশ্চিত করেনি এবং অস্বীকারও করেনি”৷ ফ্রান্সের উত্তরের সীমান্ত পুলিশও জানিয়েছে, তারা “এমন কোনো নতুন নিয়ম সম্পর্কে জানেন না”।
এর আগে গত বছর কথা বলার সময় সাঁত-ওমেয়ারের রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটর কলেছিলেন, “অভিবাসীদের জীবনের ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে প্রেফেকচুরের নির্দেশ খুবই পরিষ্কার।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করে বলেছে, “এই কৌশল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। এটি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নয়; বরং মানুষের জীবনের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন।”
মাঠে কাজ করা সংস্থাগুলোও তীব্র সমালোচনা করেছে। ইতুপিয়া ৫৬ জানায়, “ফ্রান্স চ্যানেল পাড়ি ঠেকাতে একের পর এক নতুন পদ্ধতি চালু করছে, যা মানুষের জীবনকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
চ্যানেলে নৌকা ছাড়াকে ঘিরে এখন প্রায়ই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অভিবাসীরা আটক এড়াতে তাড়াহুড়ো করে নৌকায় উঠতে গিয়ে পড়ে যায়, পানিতে তলিয়ে যায়, কিংবা অনেকেই সাঁতার জানেন না। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে গিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২০ জনের বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
ইতুপিয়া ৫৬-র একজন কর্মী বলেন, “অভিবাসীরা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ঠিকমতো বাতাস দিয়ে নৌকাগুলো ফোলায় না। অনেকে মজবুত তলাও বসায় না, ফলে নৌকা দ্রুত ডুবে যায়। আমরা দেখছি অনেককে সাঁতরে তীরে ফিরতে হচ্ছে।