মুরগি খাওয়া ভালো না খারাপ? গবেষণায় যা জানা গেল

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ০৪:১২ পিএম

সুস্বাদু এবং প্রোটিনে ভরপুর উৎস হিসেবে মুরগির মাংস বরাবরই পরিচিত। বহু পুষ্টিবিদ গরুর মাংসের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে মুরগির মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে দক্ষিণ ইতালিতে সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণা এই ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

এই গবেষণায় ৪,৮৬৯ জন মধ্যবয়সী ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ৩০০ গ্রাম বা তার বেশি মুরগির মাংস খাওয়ার সঙ্গে সার্বিক মৃত্যুহার এবং হজম তন্ত্রে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বাড়তে পারে। গবেষণার ফল অনুযায়ী, এই পরিমাণে মুরগি খেলে মৃত্যুঝুঁকি ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, আর হজমতন্ত্রের ক্যানসারের আশঙ্কা গড়ে ২.৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে; যা পুরুষদের ক্ষেত্রে আরও কিছুটা বেশি।

তবে গবেষণাটির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের খাদ্যাভ্যাসের তথ্য তাদের নিজেদের স্মৃতির ওপর নির্ভর করে সংগ্রহ করা হয়েছে, যা তথ্যের নির্ভুলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এছাড়া, তাদের দৈনন্দিন অভ্যাস, মুরগির উৎস এবং রান্নার ধরন সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য ছিল না, যা ফলাফল বিশ্লেষণে প্রভাব ফেলতে পারে।

সব মুরগি এক নয়: চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, সব ধরনের মুরগির মাংস একরকম নয়। শিল্পকারখানায় উৎপাদিত মুরগিতে ব্যবহৃত হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। একইভাবে, উচ্চ তাপে মাংস রান্না করলে ‘এইচসিএ’ ও ‘পিএএইচ’ নামক ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হয়, যা ক্যানসারের জন্য দায়ী হতে পারে। তাছাড়া, প্রক্রিয়াজাত মুরগির পণ্য—যেমন চিকেন সসেজ, হট ডগ বা ডেলি মিটেও ব্যবহৃত সংরক্ষণ উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের টড ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মেডিকেল ডিরেক্টর ড. নিলেশ ভোরা মনে করেন, “সম্ভবত এবারই প্রথম মুরগির মাংসকে হজমতন্ত্রের ক্যানসারের সম্ভাব্য ঝুঁকির উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে।” আর ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট জনস ক্যানসার ইনস্টিটিউটের সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট ড. অ্যান্তন বিলচিক বলেন, এই গবেষণা উদ্বেগজনক, তবে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

মুরগি খাওয়া কি বন্ধ করবেন: বিশেষজ্ঞরা মুরগি একেবারেই খাওয়া বন্ধ করতে বলছেন না। বরং তারা পরামর্শ দিচ্ছেন পরিমাণ ও রান্নার পদ্ধতির উপর জোর দিতে। হার্ট বিশেষজ্ঞ ও ডায়েটিশিয়ান মিশেল রাউথেনস্টেইন বলেন, সপ্তাহে প্রায় ২০০ গ্রাম বা ৭ আউন্স পর্যন্ত লিন ও আনপ্রসেসড মুরগির মাংস নিরাপদ। তবে রান্নার পদ্ধতি যেমন বেকিং, স্টিমিং বা হালকা তেলে রোস্ট করাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ড. বিলচিকের মতে, শুধু মুরগির ক্ষেত্রেই নয়, মাছসহ অন্যান্য প্রোটিন উৎসেও রান্নার ধরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাদ্যাভ্যাস পরিকল্পনার সময় খাদ্যের গুণগত মান, পরিমাণ ও রান্নার পদ্ধতি সবই বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

এই গবেষণা মুরগির মাংসের সুরক্ষা সম্পর্কে আমাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বাসে সাময়িক প্রশ্ন তুললেও, একে এককভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে নেয়া ঠিক হবে না। বরং এটি আরও গবেষণার দরজা খুলে দিয়েছে।