ওজন কমানো থেকে ক্যানসার প্রতিরোধ, দিনে কয় কাপ গ্রিন টি পান করবেন?

গ্রিন টি এখন আর শুধুমাত্র একটি পানীয় নয়, এটি হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চিকিৎসকদের মতে, গ্রিন টি-তে রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর প্রকৃত উপকার পেতে দিনে কতটুকু গ্রিন টি পান করা উচিত—সেই প্রশ্নের উত্তর জানাও জরুরি। হেলথলাইনের প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা সে বিষয়ে কথা বলেছেন।
কেন গ্রিন টি উপকারী: গ্রিন টি মূলত ‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস’ নামক গাছের পাতার বিশেষ প্রক্রিয়াজাত রূপ। এতে রয়েছে ক্যাটেচিন নামের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রাকৃতিক যৌগ ও ক্যাফেইন, যা মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
দিনে কত কাপ পান করবেন: বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ কাপ গ্রিন টি পান করলেই পাওয়া যায় উল্লেখযোগ্য উপকারিতা। তবে নির্দিষ্ট কিছু রোগ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন:
1. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: দিনে ৫-৬ কাপ
2. প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে: দিনে ৫ কাপ বা তার বেশি
3. স্তন ক্যানসারের পুনরাবৃত্তি রোধে: দিনে ৩ কাপ বা তার বেশি
4. মুখগহ্বর ক্যানসার প্রতিরোধে: দিনে ৩-৪ কাপ
5. হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে: দিনে ১-৩ কাপ
গ্রিন টির অন্যান্য উপকারিতা: চিকিৎসকরা গ্রিনটি আরও কিছু উপকারিতার উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা। এগুনো হলো:
স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
1. অ্যালঝাইমার ও পারকিনসনের মতো স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি কমায়
2. দাঁতের জীবাণু ধ্বংস করে মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
3. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
অতিরিক্ত পান করলে কী ক্ষতি হতে পারে: যদিও গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন—অনিদ্রা, উদ্বেগ, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। এর প্রধান কারণ গ্রিন টিতে থাকা ক্যাফেইন। এছাড়া গ্রিন টি শরীরের আয়রন শোষণে বাধা দিতে পারে, ফলে রক্তশূন্যতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই যাদের আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাদের উচিত খাবার খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর গ্রিন টি পান করা।
গ্রিন টির পানে বিশেষ কিছু সতর্কবার্তা দিয়েছেন চিকিৎসকরা: গ্রিন টির বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। তবে সেটা সবার ক্ষেত্রে নয়। শরীরের বিশেষ অবস্থায় গ্রিন টি পানে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসকরা। এগুলো হলো:
1. যারা গর্ভবতী বা শিশুকে দুধ পান করাচ্ছেন
2. যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন
3. উদ্বেগ বা হৃদরোগের ওষুধ গ্রহণ করছেন যারা।
গ্রিন টি নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে পান করলে তা হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যগত উন্নয়নের অন্যতম সহযাত্রী। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ কাপ গ্রিন টি পানই যথেষ্ট। তবে শরীরের অবস্থা বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী মাত্রা নির্ধারণ করাই শ্রেয়। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা মানেই সব কিছুর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা গ্রিন টির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।