বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত ছয় রাষ্ট্রপ্রধান

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৯ পিএম

বিশ্ব ইতিহাসে ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপ্রধানের বিচার ও মৃত্যুদণ্ড বিরল হলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায়গুলোর একটি। সামরিক অভ্যুত্থান, বিপ্লব, গণ-অপরাধ কিংবা রাজনৈতিক রূপান্তরের মুহূর্তে বিভিন্ন দেশ তাদের ক্ষমতাচ্যুত নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করেছে।

কেউ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন, কেউ আবার আত্মসমর্পণের পরমুহূর্তেই নিহত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে গতকাল সোমবার মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতের দিল্লিতে সেখানকার সরকারের তত্ত্বাবধানে অজ্ঞাতনিবাসে বসবাস করছেন।

নিকোলাই চশেস্কু : দীর্ঘ ২৪ বছর রুমানিয়া শাসন করেন কমিউনিস্ট নেতা নিকোলাই চশেস্কু। ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট শাসনের পতনের সময় তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রীকে সামরিক ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়। গণহত্যা ও অর্থনৈতিক ধ্বংসের অভিযোগে ওই বছরের বড়দিনে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। আধুনিক রুমানিয়ার ইতিহাসে এটি ছিল শেষ মৃত্যুদণ্ড।

জুলফিকার আলী ভুট্টো : পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা ও নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ১৯৭৭ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। পরে বিতর্কিত হত্যা মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৯৭৯ সালে ফাঁসি দেওয়া হয়। দীর্ঘ চার দশক পর, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিচারকে ‘মারাত্মকভাবে ত্রুটিপূর্ণ’ ঘোষণা করেন।

সাদ্দাম হোসেন : ১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইরাকের শাসক ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধে তাঁকে ইরাকি ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে তাঁর মৃত্যুদণ্ড ছিল আধুনিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিচারগুলোর একটি।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি : লিবিয়ার দীর্ঘ ৪২ বছরের শাসক গাদ্দাফি ২০১১ সালে বিদ্রোহে ক্ষমতা হারান। আদালতের কোনো রায় ছাড়াই আটক হওয়ার পর মাঠেই তাঁকে হত্যা করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং লিবিয়ায় বিভক্ত রাজনীতির সূচনা হয়।

মেংগিস্তু হাইলি মারিয়াম : ‘রেড টেরর’ নামের কুখ্যাত দমন-পীড়নের দায়ে ইথিওপিয়ার সাবেক দার্গ নেতা মেংগিস্তুর অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি জিম্বাবুয়েতে নির্বাসনে নিরাপদেই বাস করছেন।

চুন দু-হোয়ান : গওয়াংজু গণ-অভ্যুত্থান দমন এবং ১৯৭৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের দায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চুন দু-হোয়ান মৃত্যুদণ্ড পান। পরে দণ্ড মওকুফ হয় এবং তিনি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা লাভ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক যাত্রায় এটি ছিল বড় টার্নিং পয়েন্ট।

জোসেফ কাবিলা : ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট থাকা জোসেফ কাবিলা ২০২৫ সালে তাঁর অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদ্রোহ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। এটি বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত রাজনৈতিক-আইনি ঘটনা। তবে তিনি গ্রেপ্তার হননি এবং অভিযোগ অস্বীকার করছেন।