গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি: রিভিউ আবেদনে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর অনুসারীদের তৎপরতা
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতে তীব্র উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে যারা সবচেয়ে বেশি তৎপর, তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর অনুসারীরা। তাদের এই রাজনৈতিক সক্রিয়তা নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন ও সমালোচনা দুটোই বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পরাজিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা সম্প্রতি প্রার্থী পুনর্বিবেচনার রিভিউ আবেদন বিএনপির উচ্চপর্যায়ে পাঠিয়েছেন। তাদের দাবি, দল যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে তিনি এলাকায় যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য নন। তবে অন্যদিকে অনেক স্থানীয় নেতা মনে করেন, এসব তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য গণআকাঙ্ক্ষা নয়, বরং ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যেই এমন চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
স্থানীয় এক সিনিয়র বিএনপি নেতা বলেন, দলীয় মনোনয়ন একটি দীর্ঘ ও বিশ্লেষণভিত্তিক প্রক্রিয়া। কোনো মনোনয়ন–বঞ্চিত প্রার্থীর অনুসারীরা যদি ব্যক্তিগত ক্ষোভে পুরো প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন, তাহলে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মতে, মনোনয়ন নিয়ে এই অনিয়ন্ত্রিত চাপের রাজনীতি গোবিন্দগঞ্জে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে বিএনপি প্রাথমিকভাবে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিংকনকে মনোনয়ন দিয়েছে। তার পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আরও রয়েছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবির আহমদ, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহম্মেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সানোয়ার হোসেন দিপু এবং জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ওবায়দুল হক সরকার বাবলু।
স্থানীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফারুক কবির আহমদ ছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নমিনি। তিনি পরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং পরাজিত হন। তার প্রশ্ন- একজন সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী কীভাবে ইউপি চেয়ারম্যানের মতো স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেন এবং হেরে যান? তার মতে, চেয়ারম্যান নির্বাচনে না নামলে বা জিতলে এখনো তিনি দলীয় নমিনেশনের জন্য শক্ত প্রার্থী থাকতেন।
থানা যুবদলের এক নেতা অভিযোগ করেন, ফারুক চেয়ারম্যান নিজের উপজেলা চেয়ারম্যান পদ নিশ্চিত করতেই এলাকায় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি মনে করেন, শেষ পর্যন্ত তিনি লিংকনের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছেন।
এদিকে বাকি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ নেতা–কর্মীর মতে, সিদ্ধান্ত এখন পুরোপুরি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে। তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
এ অবস্থায় বিএনপি কি বর্তমান মনোনয়ন বহাল রাখবে, নাকি পরাজিত ইউপি প্রার্থীর অনুসারীদের দাবির মুখে পরিবর্তন আনবে- সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় গোবিন্দগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন। এর আগে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।