দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গুগল পে, ব্যবহার করবেন যেভাবে

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার পর দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘গুগল পে’। ডিজিটাল পেমেন্টে নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী এই সেবার মাধ্যমে এখন মোবাইল ফোন ট্যাপ করেই করা যাচ্ছে কেনাকাটার অর্থ পরিশোধ।
গত ২৪ জুন থেকে বাংলাদেশে গুগল পে চালু করেছে সিটি ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভিসা ও মাস্টারকার্ড গ্রাহকদের জন্য এ সেবা চালু করেছে। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে থাকা এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) প্রযুক্তি–সমৃদ্ধ পিওএস মেশিনে স্মার্টফোন ট্যাপ করেই করা যাচ্ছে লেনদেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চালুর মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক গুগল পে অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ১০ দিনেই ৬ হাজার ৩০০টি লেনদেন হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লেনদেন ছিল প্রায় ৭২ লাখ টাকা। একদিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪২১টি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
গুগল পে ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীর অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) সুবিধা থাকতে হবে। সাধারণত বেশির ভাগ স্মার্টফোনে এই প্রযুক্তি থাকে। এরপর প্লে স্টোর থেকে ‘গুগল পে’ বা ‘গুগল ওয়ালেট’ অ্যাপ ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে হবে।
এরপর অ্যাপে প্রবেশ করে ‘Add Payment Method’ অপশনে গিয়ে সিটি ব্যাংকের ভিসা বা মাস্টারকার্ড যুক্ত করলেই অ্যাকাউন্ট সক্রিয় হবে। মুঠোফোন দিয়ে ছবি তুলে বা কার্ডের তথ্য লিখে অ্যাপে কার্ড সংযুক্ত করা যায়। সিটি ব্যাংক জানিয়েছে, দোকান বা সেবা বিক্রির প্রতিষ্ঠানে কার্ডে লেনদেনের জন্য যন্ত্র থাকে, যা ‘পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস)’ যন্ত্র নামে পরিচিত। এনএফসি প্রযুক্তি–সংবলিত পিওএস যন্ত্রে গুগল পে ব্যবহার করে সহজেই লেনদেন করা যাবে।
লেনদেনের সময় পিওএস মেশিনে ফোনটি ট্যাপ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থ কেটে যাবে। ৫ হাজার টাকার নিচে কোনো পাসওয়ার্ড ছাড়াই পেমেন্ট করা সম্ভব। তবে এর বেশি হলে স্ক্রিন লক বা পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হবে।
নিরাপদ প্রযুক্তি
এই সেবায় ব্যবহার করা হয়েছে ‘টোকেনাইজেশন’ প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে গ্রাহকের কার্ড নম্বর গোপন থাকে এবং বিক্রেতার সঙ্গে তা সরাসরি শেয়ার হয় না। ফলে প্রতারণার ঝুঁকিও কম।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, “গ্রাহকরা যাতে আরও সহজ ও নিরাপদ উপায়ে ডিজিটাল লেনদেন করতে পারেন, সেজন্যই গুগল পে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্যান্য কার্ডধারীদের জন্যও সেবাটি উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
বর্তমানে সিটি ব্যাংকের আওতায় প্রায় ৩৫ হাজার পিওএস মেশিন রয়েছে, যার মধ্যে ৩২ হাজারেই এনএফসি প্রযুক্তি রয়েছে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য ব্যাংকের অনেক পিওএস মেশিনেও এই সেবা ব্যবহার করা সম্ভব।
সম্ভাবনার দিক
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে গুগল পে একটি যুগান্তকারী সংযোজন। এতে নগদ লেনদেন কমে আসবে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে। ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য ব্যাংক, বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং খুচরা বিক্রেতারাও এই সেবায় যুক্ত হলে এর প্রসার আরও বাড়বে।