বিষাক্ত ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন নয়াদিল্লি, বায়ুদূষণ ১৬ গুণের বেশি

বায়ুদূষণের চরম মাত্রায় ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির আতশবাজি, যানবাহনের ধোঁয়া ও কৃষিজ ফসল পোড়ানোর ফলে দূষণ এতো বেড়েছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশকৃত দৈনিক সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় বাতাসের ক্ষতিকর কণার পরিমাণ ১৬ গুণ ছাড়িয়ে গেছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ৩ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস ভারতের রাজধানী এই মহানগরীতে। প্রতি বছর শীতকালে শহরজুড়ে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীগুলোর তালিকায় নিয়মিতই উঠে আসে নয়াদিল্লির নাম।
মূলত শীতকালে ঠান্ডা বাতাস দূষণ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি আটকে রাখে। ফলে ফসলের খড় পোড়ানো, কল-কারখানা ও ভারী যানবাহনের ধোঁয়া মিলে তৈরি হয় বিষাক্ত পরিবেশ। তবে হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব দীপাবলি উপলক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে আতশবাজি ফোটানোর কারণেও দূষণ মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে সোমবার রাতে।
মূলত আলো উৎসব উপলক্ষ্যে টানা কয়েকদিন ধরে আতশবাজি পোড়ানোয় বাতাসে ক্ষতিকর কণার পরিমাণ বেড়ে যায়।
অবশ্য দীপাবলির সময় আতশবাজির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এই মাসে শিথিল করেছিল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত সেসময় কম দূষণকারী ‘সবুজ আতশবাজি’ ব্যবহারের অনুমতি দেন, যা তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর কণা নির্গমন করে।
তবে বিগত বছরগুলোতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘আইকিউএয়ার’ এর তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ভারতের এই রাজধানী শহরের কিছু অংশে পিএম ২.৫ কণার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২৪৮ মাইক্রো গ্রামে পৌঁছেছে। এই কণাগুলো এতটাই ক্ষুদ্র যে তা রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
সরকারের ‘এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট কমিশন’ জানায়, আগামী দিনগুলোতে বায়ুর মান আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে। এমনকি ডিজেলচালিত জেনারেটরের ব্যবহার কমাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।
শহর কর্তৃপক্ষ জানায়, এই মাসে প্রথমবারের মতো দিল্লির আকাশে বিমান দিয়ে ‘ক্লাউড সিডিং’-এর পরীক্ষা চালানো হবে। এই পদ্ধতিতে মেঘে লবণ বা অন্যান্য রাসায়নিক ছুড়ে বৃষ্টি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়, যাতে বাতাস পরিষ্কার হয়।
গত বছর দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ-এর একটি গবেষণায় বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে বায়ু দূষণজনিত কারণে ৩৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের শিশু সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, দূষিত বাতাসের কারণে শ্বাসতন্ত্রের তীব্র সংক্রমণে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা।