গোবিন্দগঞ্জে ২২ কোটি টাকার খয়রাতি চাল আত্মসাৎ মামলায় মূল আসামিদের নাম কর্তন: ক্ষোভে গণস্বাক্ষর

লালসবুজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ২২ কোটি টাকার খয়রাতি চাল (জিআর) আত্মসাৎ মামলার চার্জশিট থেকে মূল আসামিদের নাম বাদ দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেছেন।

২০১৬–১৭ অর্থবছরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুকূলে গোবিন্দগঞ্জে ৫,৮২৩ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার তৎকালীন বাজারমূল্য ছিল ২২ কোটি টাকারও বেশি। অভিযোগ ওঠে—ভুয়া কাগজপত্র, জাল স্বাক্ষর ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ বিপুল পরিমাণ চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুর ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর (স্মারক নং- গাইবান্ধা/অনুঃ (তদন্ত-১)/৩০৮২৮) প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে এবং পরে বিষয়টি প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। দায়মুক্তির সুপারিশ গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় দুদকের কমিশন সভা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়। ওই তদন্তে ১৯টি পৃথক মামলার সুপারিশ করা হয়, যাতে ১৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান, একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, একজন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

২০২১ সালের ২৬ আগস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে মামলাটি (নথি নং- ০০.০১.৩২০০.৬৩৫.০১.০৩০.১৭) দায়ের করেন এবং পরে নিজেই তদন্ত করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, চার্জশিট থেকে মূল আসামিদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য দুদকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অর্থ লেনদেন করেছেন। এদের মধ্যে পরিচালক জহুরুল হুদা ও উপসহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) হোসেন শরীফের নামও উচ্চারিত হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জের মানুষের দাবি, ২২ কোটি টাকার চাল আত্মসাতের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হান্নান, তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল আহাদ এবং তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা। অভিযোগ অনুযায়ী, ২ হাজার ২৫৩টি ধর্মীয় সভার নামে ৫ হাজার ৮২৩ টন চাল বরাদ্দ দেখানো হলেও মাত্র তিন দিনে এসব চাল উত্তোলন দেখানো হয়—যা স্থানীয় খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি।

এ ছাড়া স্থানীয়দের অভিযোগ, মামলার চার্জশিটে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির নাম অন্তর্ভুক্ত করে বাকিদের নাম বাদ দিয়ে “আই ওয়াশ” করা হয়েছে। তাদের দাবি—তৎকালীন ইউএনও মো. আব্দুল হান্নানের মাধ্যমে দুদকের অসাধু কর্মকর্তাদের ৫ কোটি টাকার বেশি ঘুষ দেওয়া হয়েছে।

চার্জশিট থেকে মূল আসামিদের নাম বাদ যাওয়ার ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জে গণআক্রোশ সৃষ্টি হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিক, কৃষক, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২ হাজার ৯৪৫ জন সচেতন নাগরিক গণস্বাক্ষর দিয়ে মামলাটি পুনঃতদন্ত করে মূল আসামিদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে আবেদন জানিয়েছেন।