বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫
বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

বিমানবন্দরেই দেখা হবে মা-ছেলের

বিমানবন্দরেই দেখা হবে মা-ছেলের

প্রকাশ:

বহু প্রতীক্ষার পর উন্নত চিকিৎসার্থে আজ রাতে লন্ডন রওনা হবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। রাত ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতার আমিরের পাঠানো রয়েল কাতার আমারি বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি। হিথ্রো বিমানবন্দরে বেগম জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাবেন তাঁর বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং পরিবারের সদস্যরা। অর্ধ যুগের বেশি সময় পর দেখা হবে মা ও ছেলের। বিমানবন্দরের সামনে যুক্তরাজ্য বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাবেন।

লন্ডন পৌঁছেই সেখানকার ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল (অ্যাডভান্স হেলথকেয়ার সেন্টার) ‘লন্ডন ক্লিনিক’-এ ভর্তি হবেন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান। ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এ মুহূর্তে যেসব ফর্মালিটিজ আছে, সেগুলো সম্পন্ন করে কাল (আজ মঙ্গলবার) রাত ১০টায় ইনশা আল্লাহ কাতারের আমিরের স্পেশাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ম্যাডাম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-দোহা এবং দোহা-লন্ডনের হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা দেবেন।’

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে তাঁর রাজকীয় বহরের এ বিশেষ বিমান দিয়েছেন। কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

অধ্যাপক ডা. জাহিদ জানান, লন্ডন ক্লিনিক বলে একটা পুরনো ঐতিহ্যবাহী হসপিটাল আছে। এটি এনএইচএসের অধীনে একটি (অ্যাডভান্স হেলথ কেয়ার সেন্টার) হসপিটাল, সেখানে ‘ম্যাডামকে’ ভর্তি করা হবে। হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে তাঁকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রাজকীয় কাতারের চারজন চিকিৎসক এবং প্যারামেডিকস থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্য এ বিমানে যাবেন। তাঁরা হলেন অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।

এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ছোট পুত্রবধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা : ডা. জাহিদ বলেন, আপনাদের মাধ্যমে সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যারা ম্যাডামের সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করেছেন তাদের সবার কাছে দলের পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। ম্যাডাম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, দল ধন্যবাদ জানিয়েছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ম্যাডাম যাতে আগামী চিকিৎসাটায় সুস্থ হয়ে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আবারও আমাদের মাঝে ফেরত আসতে পারেন সেজন্য দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটিসহ সবাই দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। ম্যাডামের পরিবারের পক্ষ থেকেও দোয়া চাওয়া হয়েছে।

এখন লন্ডনের হসপিটালেই চিকিৎসা : ডা. জাহিদ আরও বলেন, ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তাঁর লিভার সিরোসিসের জটিলতা নিরসনে কিছু চিকিৎসা দেশে হয়েছে আরও অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার হার্টে একাধিক ব্লক ছিল। জীবন বাঁচানোর জন্য যেটুকু চিকিৎসা দরকার, সেটুকু করা হয়েছিল ওই সময়ে। কারণ ওই সময়ে তাঁর শারীরিক সুস্থতা সে রকম ছিল না। তাঁর আরও যে ব্লকগুলো আছে সেটার চিকিৎসা করা দরকার। জটিল যে রোগগুলো আছে সেগুলোর যুগোপযোগী চিকিৎসা প্রয়োজন। কভিড-পরবর্তী বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা হয়েছে, সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দেশের চিকিৎসকরা বিশেষ করে এভারকেয়ার হসপিটালের চিকিৎসক-নার্সদের সেবা সন্তোষজনক। ম্যাডাম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতালের সেবায় কোনো ধরনের অসন্তুষ্টি নেই।

এখানে বসে আমরা জানি না, আমাদের কালকের জার্নিটা কেমন হবে। এর আগে তারিখ নির্ধারণ করেও ম্যাডামের শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় যাত্রা পেছাতে হয়েছিল। আমরা লন্ডনে মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি অ্যাডভান্স সেন্টারে চিকিৎসার জন্য ম্যাডামকে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানকার চিকিৎসকরা উনাকে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন উনার পরবর্তী করণীয় কী হবে। যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, যদি লন্ডনের ক্লিনিক সুপারিশ করে ম্যাডামকে জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তখন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হবে। বেগম জিয়া পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাবেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁর ইচ্ছা আছে। এত নির্যাতন-অত্যাচার, কষ্টের পরে শুকরিয়া আদায় করার জন্য অবশ্যই উনার ওমরাহ পালনের আগ্রহ আছে। সুস্থ থাকলেই ফেরার সময়ে বা কোনো এক সময়ে ম্যাডাম যেতে পারেন। তবে মানুষ চাইলেই কিন্তু ওমরাহ ও হজ করা যায় না, আল্লাহর ইচ্ছার প্রয়োজন হয়। কাজেই রব্বুল আলামিন যদি কবুল করেন তবেই ম্যাডাম ওমরাহ পালন করবেন।

দেশবাসীর দোয়া কামনা : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসাজনিত সফরকে সামনে রেখে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের নীতি কৌশল ও নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় খবর

আরও পড়ুন

ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা, ৪ বছরের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন

ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার একধাক্কায় অনেকটাই কমে যেতে পারে।...

যুবদল নেতার সাহায্যে ভারতে পালান ওবায়দুল কাদের!

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ...

দেশীয় ফ্রিজ এসি মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধি, বাড়তে পারে দাম

খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ার কন্ডিশনার ও...

জুনের শেষ সপ্তাহে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা...