বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

যুবদল নেতার সাহায্যে ভারতে পালান ওবায়দুল কাদের!

যুবদল নেতার সাহায্যে ভারতে পালান ওবায়দুল কাদের!

প্রকাশ:

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর থেকে লাপাত্তা হয়ে আছেন বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা। বিগত ১৬ বছর ধরেই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে থাকা দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কোনো হদিসই যেনও পাওয়া যাচ্ছিলো না। তার অবস্থান নিয়েও ছিল ধোঁয়াশা।

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তিন মাস দেশে লুকিয়ে ছিলেন। তবে সরকার সে বিষয়ে অবগত ছিল না। জানা থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতো।

‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা’- ফেসবুক লাইভে এসে এমন অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি।
মঙ্গলবার এসকেন্দার আলী জনি এই ফেসবুকে লাইভে এসে দলটির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন। এসব অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তদন্তের অনুরোধও জানান।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে যশোর জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনিকে বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বলেন, জনির অভিযোগ হাস্যকর। অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। স্বৈরাচার হাসিনা এবং ওয়াবদুল কাদের কবে, কীভাবে পালিয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। আমার সংশ্লিষ্টতা থাকলে তো এতদিন গ্রেফতার হয়ে যেতাম। আপনারাও তদন্ত করে দেখেন, সে (ওবায়দুল কাদের) কোন দিক দিয়ে কোথায় গেছে। একজন একটা কথা বললেই তো হবে না।

এতদিন ধরে রাজনীতি করলাম, খোঁজখবর নিয়ে দেখেন আমরা কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত কি-না। শুধু আমাকে নয়, যুবদলের প্রেসিডেন্টের নামেও অভিযোগ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে জনি এসব বলে আসছে। সে সুস্থ নয়। এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যই এসকেন্দার আলী জনিকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভের শিরোনামে এসকেন্দার আলী জনি লিখেছেন, ‘সঠিক তদন্ত চাই, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের কাছে বরাবর। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে যশোর জেলা যুবদলের সেক্রেটারি, সাংবাদিক সম্মেলন করা হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করুন অরজিনাল অপরাধীদের শান্তি দিন।

ফেসবুক লাইভে ২৭ মিনিটের ভিডিওতে যশোর জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি অভিযোগ করেন, ‘যশোর ক্যান্টনমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ৫ তারিখের পর তাকে ভারতে পালাতে সাহায্যে করেছেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। কিছু দিন আগে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। বেনাপোলের পুটখালির গোল্ড নাসিরের সাথে (সিঙ্গাপুরে) টাকা ভাগাভাগি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘাট শহিদকে ধরলে এ তথ্য পাওয়া যাবে। শুধু ওবায়দুল কাদের নয়; আওয়ামী লীগের বহু নেতাকে ভারতে যেতে সাহায্য করেছে যশোর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। এ তথ্য সব নেতাই জানে। এখন যশোর যুবদল দেখলে মনে হবে যুবলীগ হেঁটে যাচ্ছে। যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা দলকে যুবলীগে পরিণত করেছে।’

ফেসবুক লাইভে তিনি আরও বলেন, আমি রাজপথে মার খেয়েছি, আমার ভাই মার খেয়েছে। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের কারণে পরিবারসহ জেল খেটেছি। আমি ১৭ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার ও ত্যাগী নেতা হয়েও আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি আন্দোলন সংগ্রাম করবো; ত্যাগী নেতাদের কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে। যুবদলের নেতাকর্মী জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে মিছিল করেছে। ভিডিওসহ নেতৃবৃন্দের জানানো হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোপনে যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহমেদ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের সাথে মদের ব্যবসা করেন। যুবদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে যুবলীগের সন্ত্রাসীদের দলে নিয়ে এসেছেন। যারা বিএনপি অফিস ভাঙচুর করেছে, দলের নেতাদের ছবি ভাঙচুর করেছে, তারা এখন যুবদলে। এখন যুবদলের সভাপতি-সম্পাদক বলছেন ৫/৭ কোটি টাকা খরচ করে কমিটি নিয়ে আসবেন।’

বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি ফেসবুক লাইভের বক্তব্য নিশ্চিত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সঠিক তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি এবং তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এ বিষয়ে জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ বলেন, ‘জনি নেশাগ্রস্ত ছেলে। বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় জেলা বিএনপি ও জেলা যুবদলের সুপারিশে কেন্দ্রীয় যুবদল তাকে বহিস্কার করেছে। সে উন্মাদ হয়ে গেছে। উন্মাদ ও বহিস্কৃত লোক কি বলল, সেটি আমলে নিচ্ছি না। আমলে নেওয়ার দরকার নেই। আমরা কেমন লোক, যশোরের মানুষ জানে। ১৮ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ৩৫ থেকে ৪০ বার জেল খেটেছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় খবর

আরও পড়ুন

ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা, ৪ বছরের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন

ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার একধাক্কায় অনেকটাই কমে যেতে পারে।...

দেশীয় ফ্রিজ এসি মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধি, বাড়তে পারে দাম

খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ার কন্ডিশনার ও...

জুনের শেষ সপ্তাহে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা...

বিকেলে লন্ডন পৌঁছবেন খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশে কাতারের আমিরের...