পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করতে সরকারের তিনজন উপদেষ্টা রাঙামাটিতে পৌঁছেছেন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটি রাঙামাটি পৌঁছায়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও দলে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পরিদর্শন করতে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা দেয় প্রতিনিধি দলটি।
রাঙামাটিতে সেখানকার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রতিনিধিরা। এরপর দুপুর ৩টা নাগাদ অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রতিনিধি দলটি খাগড়াছড়ি যাবেন।
এদিকে, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের ঘটনায় অনির্দিষ্ট কালের পরিবহন ধর্মঘট ও তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলছে।
তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। একই সঙ্গে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটিতে সংঘর্ষের ঘটনায় বাস, সিএনজি, ট্রাক ভাঙচুর ও শ্রমিক আহতের প্রতিবাদে মালিক শ্রমিক যৌথ বিবৃতিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়।
শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনায় ফুটে উঠেছে ক্ষত চিহ্ন। বেশ কিছু দোকানে আগুন দেয়া হয়। পুড়ে গেছে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শনিবার এরই প্রভাবে রাঙামাটি থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায় নি এবং আসেওনি। আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরের একমাত্র পরিবহন সিএনজি চলাচল করছে না। এতে এই রুটে চলাচলকারীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। দোকানপাট শপিংমল এখনো খোলেনি কেউ।
রাঙামাটি শহরের পৌর এলাকায় এখনো ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। শহরের মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি টহল দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যারাই ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদেরই টহল দলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি থমথমে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র থেকে যানা যায়, শুক্রবার তুলনায় শনিবারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিস্থিতি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শনের একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর জনৈক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখিত এবং ব্যথিত। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী সকল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।