দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৭ জন; এই সময়ে মশাবাহিত রোগটিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৫৪ হাজার ৭০২ জনে দাঁড়িয়েছে।
চলতি মাসের ২৫ দিনেই মারা গেছেন ১০৬ জন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার। বৃষ্টি মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি করবে। সম্ভাব্য সব প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। হটস্পট ম্যানেজমেন্ট, সংক্রমণ ছড়ায়নি এমন জায়গায় মশার লার্ভা যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বর্জ্যব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। এটি নিশ্চিত করা গেলে রোগী কমে আসবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২২৮, ঢাকা বিভাগে ১১৪, ময়মনসিংহে ১২, চট্টগ্রামে ৩৯, খুলনায় ৩৩, রাজশাহী বিভাগে ১৯, রংপুর বিভাগে পাঁচ, বরিশাল বিভাগে ২৫ এবং সিলেট বিভাগে দুজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গতকাল যিনি মারা গেছেন, তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৫০ হাজার ৬৪৭ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৭৮৬ রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১ হাজার ৮২৭; আর ১ হাজার ৯৫৯ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। এ বছর মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে ৩১ হাজার ৫৮৬ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজার ১১৬ জন। অক্টোবরের ২৫ দিনে ২৩ হাজার ৭৬৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের। এ বছর এক মাসে এটাই সর্বোচ্চ ভর্তি ও মৃত্যু।
গত দুই বছরের মতো এবারও মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুর ডেন-২ সেরোটাইপ বা ধরনে। তবে গত দুই বছর ঢাকাসহ দেশের মানুষ এই ডেন-২ সেরোটাইপে আক্তান্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউিট (আইইডিসিআর) এ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫০ জন রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করেছে। এ পরীক্ষায় দেখা যায় ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুরোগীর ধরন ছিল ডেন-২।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।