শীতকালে ঠান্ডা বা ফ্লু হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার। অনেকেই মনে করেন ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণেই এমন হয়। তবে চিকিৎসকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে ঠান্ডা আবহাওয়াই অসুস্থতার আসল কারণ নয়, বরং এই সময়ে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। আর এ কারণেই ঠান্ডা বাড়ে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
শীতকালে ভাইরাস সংক্রমণের কারণ: তাদের মতে সাধারণত ঠান্ডার প্রধান কারণ রাইনোভাইরাস। এছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং এসএআরএস-কোভিটু ভাইরাসগুলো ঠান্ডা আবহাওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠে। এছাড়াও শীতল তাপমাত্রা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বাইরের স্তরকে আরও কঠিন এবং স্থিতিস্থাপক করে তোলে। যার ফলে মানুষ সহজে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
শীতকালে বাতাস অনেক বেশি শুষ্ক থাকে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের জলীয় কণাগুলো দ্রুত শুকিয়ে দেয়। এর ফলে ছোট কণা তৈরি হয়, যা বাতাসে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী থাকে। এছাড়াও শীতকালে মানুষ সাধারণত ঘরের ভেতর বেশি সময় কাটায়।এ সময় কম সূর্যালোক পাওয়ার কারণে শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে।
প্রতিরোধের উপায়: শীতকালে ভাইরাস সংক্রমণ রোধে কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো:-
হাত ধোয়ার অভ্যাস: নিয়মিত এবং সঠিকভাবে হাত ধোয়ার মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
মুখ স্পর্শ এড়ানো: মানুষ সাধারণত প্রতি ঘণ্টায় ৯-২৩ বার মুখ স্পর্শ করে। এটি এড়াতে সচেতন থাকতে হবে।
হাইড্রেট থাকা: পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের মিউকাস মেমব্রেন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
সুষম খাদ্যগ্রহণ: শাকসবজি, ডিম, সালমন এবং টুনা জাতীয় খাবার ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা: শীতে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়া একটি সাধারণ প্রবণতা। তাই ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করার চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম: ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই শীতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার: ঘরের বাতাস আর্দ্র রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে নাক ও গলার শুষ্কতা কমবে।
ফ্লু এবং কোভিড-১৯ টিকা নেয়া: প্রতি বছর ফ্লু এবং কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
শীতকালে ঠান্ডা লাগার প্রধান কারণ ঠান্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে ভাইরাসের দীর্ঘস্থায়ী সক্রিয়তা। তবে, সঠিক অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রেখে এই ঋতুতে সুস্থ থাকা সম্ভব। ঠান্ডা আবহাওয়ায় নিজের শরীরের যত্ন নেয়া এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।