ঢাকা থেকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৪০ দিন পার হয়েছে। শেখ হাসিনার দমন পীড়নের প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্র জনতা আন্দোলনে নামে, এ আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ।
‘আয়রন লেডি’ হিসেবে নিজের ইমেজ তৈরি করা শেখ হাসিনা কেন এত দ্রুত ক্ষমতা হারালেন সেটি বোঝার চেষ্টা করছেন বিশ্বের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। একই সঙ্গে তার ক্ষমতা হারানোর পর বাংলাদেশে কি পরিবর্তন হচ্ছে সেদিকেও তারা নজর রাখছে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পর স্বৈরাচারের মতো বাংলাদেশকে শাসন করেছেন, বিরোধীদের কঠোরভাবে দমন করেছেন। এছাড়া তিনি তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের ইমেজকে পুঁজি করে একটি স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন।
শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র কায়েম এবং এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল, তার অবসান হয়েছে।
বর্তমান সময়টি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের। কারণ তারা ‘বর্ষা বিপ্লবের’ মতো পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তবে এটা নিশ্চিত নয় যে এই পরিবর্তন স্থায়ী হবে কিনা এবং শিগগিরই দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে কিনা। তবে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ যথেষ্ট চাপে পড়েছে, কিন্তু তারা প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করবে, সেটিও আবার এই যুক্তিতে যে- তারা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির প্রতিনিধিত্ব করে। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে তার দল জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।
শেখ হাসিনার হাত ধেরেই বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। তবে সেই উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না এবং বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি বৈষম্যও তীক্ষ্ন হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে হাসিনা ভারতীয় আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পণকে বেছে নিয়েছিলেন। যা স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশিদের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর ছিল। আপাতত, বাংলাদেশে ভারত অনেক চাপে পড়ে গেছে, তবে এটি স্পষ্ট যে- তারা নিজেদের প্রভাব রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তার কলামে লিখেছেন, হাসিনা যতদিন দিল্লিতে থাকবেন, ততদিন ঢাকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আইজাজ আহমদ চৌধুরী আরও লিখেছেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পলায়নকে ভারত সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে এবং পরিস্থিতিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে রাজনৈতিব এই পট-পরিবর্তনটি বাংলাদেশকে মুসলিম মৌলবাদের দিকে ধাবিত করবে এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। যদিও বিবিসির সংবাদ অনুসারে- এসব খবরের বেশিরভাগই গুজব ছিল।
শেখ হাসনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল করতে এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে সংগ্রাম করছে।
আঞ্চলিক পরিস্থিতির জন্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন, যা ১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি চান বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হবে এবং তারপরে সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।
আইজাজ আহমদ চৌধুরী বলেছেন, হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। পাকিস্তানের অবশ্যই বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা থাকতে হবে।