আধুনিক এই সময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় সবার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন বাজারে যাওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে সপ্তাহের প্রয়োজনীয় শাক-সবজি, মাছ-মাংস বাজার একদিনই করা হয়। যা কিনা বাসার রেফ্রিজেরেটর বা ফ্রিজে সংরক্ষণে রাখা হয়। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের সুবিধার্থেই এমনটা করা হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, ঠিক কতদিন মাছ-মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করা উচিত।
মাছ-মাংস ডিপ ফ্রিজে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে কী ক্ষতি হতে পারে কিংবা ঠিক কতদিন সংরক্ষণ করা যাবে, তা জানিয়েছেন রাজধানীর মিরপুর জেনারেল হাসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তারানা জান্নাত মুমু। এ পুষ্টিবিদ বলেন, যেকোনো খাবারই সজীব-সতেজ খাওয়া ভালো। মাছ-মাংস সংরক্ষণ করলেও তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, ডিপ ফ্রিজে দীর্ঘদিন মাছ-মাংস সংরক্ষণ করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আবার দীর্ঘদিন পর রান্না করলে এর স্বাদেরও তারতম্য হয়। সাধারণত কাঁচা অবস্থায় মাছ-মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। তবে রান্না করা অবস্থায় বাতাস প্রবেশ করতে পারে না এমন বক্সে ভরে ফ্রিজে রাখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২-৩ দিনের মধ্যে খাবার খেয়ে ফেলা ভালো।
এছাড়া কাঁচা মাছ-মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। তাতে পুষ্টিগুণ কম নষ্ট হবে। মাছ-মাংস একসঙ্গে ফ্রিজে রাখা যাবে না। বাজার থেকে আনার পর ভালো করে ধুয়ে, কেটে বা আস্ত অবস্থায় পলিথিন দিয়ে ভালো করে বেঁধে রাখতে হবে। যাতে করে তাতে কোনো ধরনের বাতাস প্রবেশ করতে না পারে।
ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রে মাংস বড় টুকরো করে রাখতে হবে। মাছ ভালো করে ধুয়ে রাখতে হবে। কেননা, মাছের ফুলকা বা কানকোতে ব্যাকটেরিয়া থাকে। ভালো করে ধোয়া না হলে তা মাছের মধ্যে থেকে যায়। আর যা ঠান্ডা তাপমাত্রায় বংশবিস্তার করে এবং মাছ নষ্ট করে। কিছু কিছু সময় দেখে বোঝা যায় না যে মাছ নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় এসব মাছ খাওয়ার ফলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য বায়ুরোধী বক্সে মাছ-মাংস রাখা উচিত। এভাবে মাছ সর্বোচ্চ ১৫ দিন এবং মাংস ২-৩ মাস রাখা যায়।
মাছ-মাংস একসঙ্গে ফ্রিজে সংরক্ষণ না করে অল্প অল্প করে ভাগ করে রাখতে হবে। প্রয়োজনের সময় ফ্রিজ থেকে বের করে প্রথমে বরফ গলানোর পর ফের ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়। এতেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। কেউ কেউ কুরবানির খাসি-গরুর মাংস একবছর পর্যন্ত ফ্রিজে রাখেন। যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কেননা, ফ্রিজে প্রোটিনজাতীয় খাবার অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমিত হয়। আবার পুষ্টিগুণও একদম নষ্ট করে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা মাছ-মাংস খাওয়ার ফলে ফুড পয়জনিং ও ফুড ইনফেকশনও হতে পারে। গ্যাসট্রিক-ডায়রিয়া ও বমির মতো সমস্যাও হতে। অনেক সময় এর থেকে জটিল অসুখও হওয়ার আশঙ্কা থাকে।